আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডটি সারা দেশে তীব্র ক্ষোভ

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডটি সারা দেশে তীব্র ক্ষোভ 


আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরাসরি প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখ থেকে ঘটনার বর্ণনা শোনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ঘটনাটির প্রকৃত অবস্থা ও ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করতে সহায়তা করতে পারে। আবরার ফাহাদ ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) একজন মেধাবী ছাত্র, যিনি ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে তার নিজ হলের ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর দ্বারা নির্মমভাবে হত্যা হন। হত্যার মূল কারণ হিসেবে রাজনৈতিক মতবিরোধ ও তার ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে বিরোধের কথা উঠে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য ও পুলিশি তদন্তের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডটি সারা দেশে তীব্র ক্ষোভ ও শোকের সৃষ্টি করে, কারণ এটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহিংসতার একটি নির্মম উদাহরণ। সেদিনের ঘটনা নিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং বিচারের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে গেলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে:

সেদিনের ঘটনা

আবরার ফাহাদকে তার নিজ হলে ছাত্রলীগের কিছু সদস্য রুম থেকে ডেকে নেয়। তাকে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের জন্য নির্যাতন করা হয়। আবরার ফেসবুকে সরকারের একটি চুক্তির সমালোচনা করেছিলেন, যা ওই ছাত্রলীগ সদস্যদের অপছন্দ হয়। তারা তাকে ওই ফেসবুক পোস্ট নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং নির্মমভাবে শারীরিক নির্যাতন চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য

যারা প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন, তাদের মধ্যে কয়েকজন ঘটনার সময় একই হলে উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা পরে গণমাধ্যম এবং তদন্তে জানিয়েছিলেন, তারা আবরারের চিৎকার শুনেছিলেন এবং কিছুজন তাকে নির্যাতন হতে দেখেছিলেন, কিন্তু ভয়ে কেউই তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে পারেননি। অনেকেই ভীত ছিলেন যে, যদি তারা হস্তক্ষেপ করেন, তাহলে তারাও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে পারেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য অনুসারে:

  • আবরারকে বারবার রুম থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করতে দেখা গেছে, কিন্তু তাকে বাধা দেওয়া হয়।
  • দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই নির্যাতনে আবরারের শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকে, এবং পরে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

আদালত ও বিচারের প্রক্রিয়া

এ ঘটনার পরে দ্রুত একটি মামলার তদন্ত শুরু হয় এবং অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে প্রত্যক্ষদর্শী, ভিডিও ফুটেজ এবং ফরেনসিক রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্ত চালানো হয়। বিচারিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য ভূমিকা রাখে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই জানিয়েছিলেন যে আবরারের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল। তাদের বক্তব্যেই হত্যার কারণ ও হত্যাকারীদের পরিচয় স্পষ্ট হয়, যা আদালতে মামলাটির বিচারিক প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।

এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরে বুয়েট কর্তৃপক্ষও ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে, যা অনেকের মধ্যে সমর্থন পেয়েছিল।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের আরও গভীরে গেলে বিভিন্ন সূত্রের সাক্ষ্য এবং তদন্তে উঠে আসা তথ্যগুলো আরও পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়। ৬ অক্টোবর ২০১৯ সালে রাত ৮টার দিকে আবরারকে তার রুম থেকে ডেকে নেয়া হয় এবং তাকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে একদল ছাত্রলীগ কর্মী তাকে ঘিরে ধরে। তারা আবরারকে প্রথমে কিছু রাজনৈতিক প্রশ্ন করে এবং তার ফেসবুকে দেয়া একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে আক্রমণাত্মক আচরণ শুরু করে। আবরার সেই সময় ভারতের সাথে হওয়া একটি পানি বণ্টন চুক্তির সমালোচনা করে পোস্ট দিয়েছিলেন, যা তাকে বিরোধী পক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে।

নির্যাতনের প্রকৃতি

আবরারের উপর যে ধরনের নির্যাতন চালানো হয়েছিল, তা ছিল ভয়াবহ। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায় এবং তাকে বিভিন্ন ধরনের ভারী জিনিস দিয়ে মারধর করা হয়। ফরেনসিক রিপোর্ট এবং ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, তাকে স্টাম্প, ব্যাট, এবং অন্যান্য কঠিন বস্তুর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছিল। আবরারকে যখন এই নির্যাতন করা হচ্ছিল, তখন তার সহপাঠীদের মধ্যে অনেকে এই বিষয়টি জানলেও তারা এই সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি, কারণ তারা নিজেরাও একই ধরনের প্রতিশোধের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছিলেন।

শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই বুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারা বুয়েট প্রশাসন এবং সরকারের কাছে ন্যায্য বিচার দাবি করেন। শিক্ষার্থীরা একাধিকদিন ধরে ক্যাম্পাসে আন্দোলন চালিয়ে যায়, যেখানে তাদের প্রধান দাবি ছিল আবরারের হত্যার ন্যায়বিচার এবং বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। বুয়েটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও এই আন্দোলনে সমর্থন জানায়।

বুয়েট প্রশাসন পরে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে সকল প্রকার রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে এবং আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানায়। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ফোরামে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ঘটনার প্রতিবাদ করে এবং ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানায়।

বিচারের অগ্রগতি

আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত দ্রুততার সাথে এগিয়ে নেয়া হয় এবং মামলা চলাকালীন প্রায় ২৫ জনকে আসামি করা হয়। পুলিশের তদন্ত এবং আদালতের প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া যায়। আদালত প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য, ভিডিও ফুটেজ, এবং ফরেনসিক রিপোর্টের ভিত্তিতে মামলার শুনানি পরিচালনা করে।

২০২১ সালে এই মামলায় আদালত ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। এই রায়ের পর আবরারের পরিবার ও সমর্থকরা আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং ন্যায়বিচার পেয়েছেন বলে জানান। তবে, উচ্চ আদালতে আপিলের সুযোগ থাকায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায় আরও পর্যালোচনা ও আপিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে পারে।

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহিংস রাজনীতির বিরুদ্ধে একটি জাগরণ সৃষ্টি করে এবং দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যেও সচেতনতা ও প্রতিরোধের বার্তা ছড়িয়ে দেয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল সাকসেস আইটির নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪