বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ স্বাধীন করতে কত মানুষের জীবন দিতে হয়?
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস কি?
পটভূমি।
ব্রিটিশ শাসনের
অবসানের পর ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হয়ে দুটি স্বাধীন দেশ, ভারত ও পাকিস্তান, গঠিত হয়।
পাকিস্তান দুটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিল: পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) এবং পশ্চিম
পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান)। এই দুটি অঞ্চল ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক, এবং ভাষাগতভাবে
ভিন্ন হলেও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার সবসময় পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থকে অগ্রাধিকার
দিত এবং পূর্ব পাকিস্তানকে উপেক্ষা করত।
ভাষা আন্দোলন।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের
কেন্দ্রীয় সরকার উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করে, যা পূর্ব পাকিস্তানে
ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এই ক্ষোভের ফলশ্রুতিতে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে বাংলা
ভাষার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে, যা ভাষা আন্দোলন
নামে পরিচিত। এই আন্দোলন বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের ভিত্তি স্থাপন করে।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য।
পূর্ব পাকিস্তানে
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য ক্রমেই প্রকট হয়ে ওঠে। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অর্থনৈতিক
অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছিল এবং রাজনৈতিক অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছিল। ১৯৭০
সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে
বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি
করেছিল।
মুক্তিযুদ্ধের সূচনা।
১৯৭১ সালের
২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী 'অপারেশন সার্চলাইট' নামে এক নৃশংস সামরিক
অভিযান শুরু করে। এই অভিযানে তারা ঢাকাসহ পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক
গণহত্যা চালায়। এর ফলে শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন
এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।
মুক্তিযুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধ
নয় মাস ধরে চলে এবং এতে সাধারণ জনগণ, ছাত্র, কৃষক, ও মুক্তিবাহিনীসহ সকল শ্রেণির মানুষ
অংশগ্রহণ করে। ভারত সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সমর্থন জানায় এবং শেষদিকে সরাসরি
যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের প্রভাব।
মুক্তিযুদ্ধ
বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। এটি শুধু একটি স্বাধীন দেশই নয়, বরং একটি জাতির
আত্মপরিচয়ের জন্ম দেয়। এই যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভাষা, সংস্কৃতি,
এবং রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছিল, তা দেশটির ইতিহাসে চিরস্মরণীয়
হয়ে থাকবে।
বাংলাদেশের
স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল সাহসিকতা, আত্মত্যাগ এবং জাতীয় চেতনার প্রতীক, যা আজও দেশের
মানুষের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে।
১৯৭১ সালের
স্বাধীনতার যুদ্ধে ছাত্র সমাজের ভূমিকা কেমন ছিল?
১৯৭১ সালের
মহান মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারা শুধু একজন যোদ্ধা
হিসেবেই যুদ্ধ করে নি, বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতিকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রেও অগ্রণী
ভূমিকা পালন করেছিল।
ছাত্র সমাজের ভূমিকার কিছু উল্লেখযোগ্য দিক।
- আন্দোলনের পথিকৃত: ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু
করে ৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ৭০ এর নির্বাচন - প্রত্যেকটি
আন্দোলনে ছাত্র সমাজই ছিল মুখ্য চালিকা শক্তি।
- স্বাধীনতা ঘোষণার আগে: মার্চ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ই
মার্চের ভাষণের পর থেকে ছাত্ররা রাজপথে নেমে আসে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীন
বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং স্বাধীনতার ইস্তাহার পাঠ করা হয়।
- মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ: হাজার হাজার ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা
হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। তারা গেরিলা যুদ্ধ, অস্ত্র চালানো, গুপ্তচরবৃত্তি
সহ যুদ্ধের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
- জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা: ছাত্ররা গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষকে
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করত। তারা সচেতনতা সভা করত, পত্রিকা বিতরণ
করত এবং গান গাইত।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের
চেতনা ছড়ানো:
অধিকৃত বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্ররা গোপনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়াত।
তারা বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম, প্যাম্ফলেট তৈরি করে ছড়িয়ে দিত।
- বিদেশে প্রচারণা: অনেক ছাত্র বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের
পক্ষে প্রচারণা চালায়। তারা বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম সম্পর্কে
অবহিত করত।
ছাত্র সমাজের ভূমিকার গুরুত্ব।
- মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রেরণা: ছাত্র সমাজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার
প্রেরণা জুগিয়েছিল।
- জনগণের একতা: ছাত্ররা জনগণকে একত্রিত করেছিল।
- যুদ্ধের সফলতা: ছাত্রদের অবদান ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের
সফলতা অর্জন করা সম্ভব হত না।
সারসংক্ষেপ।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারা শুধু একজন যোদ্ধা হিসেবেই যুদ্ধ করে নি, বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতিকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। তাদের ত্যাগ ও অবদানের কারণেই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি।
একটি দেশ সংস্করণে ছাত্র সমাজের ভূমিকা কতটুকু ?
একটি দেশ সংস্করণে ছাত্র সমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা একটি দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের হাতেই দেশের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। ছাত্র সমাজ একটি দেশের উন্নয়নে বিভিন্নভাবে অবদান রাখতে পারে।
ছাত্র সমাজের ভূমিকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক।
- সামাজিক পরিবর্তন: ছাত্র সমাজ সামাজিক পরিবর্তনের
মূল চালিকা শক্তি। তারা নতুন চিন্তাধারা, নতুন ধারণা এবং নতুন আন্দোলনের জন্ম
দেয়।
- রাজনৈতিক সচেতনতা: ছাত্ররা রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি
করে এবং গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে সাহায্য করে।
- অর্থনৈতিক উন্নয়ন: ছাত্ররা নতুন নতুন উদ্ভাবন করে
এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- সাংস্কৃতিক উন্নয়ন: ছাত্ররা দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে
সমৃদ্ধ করে।
- সামাজিক সমস্যা সমাধান: ছাত্ররা সামাজিক সমস্যা সমাধানে
সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
- দেশপ্রেম জাগরণ: ছাত্ররা দেশপ্রেম জাগরণে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছাত্র সমাজের ভূমিকা।
বাংলাদেশে ছাত্র
সমাজ সবসময়ই দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা
যুদ্ধ, গণতন্ত্রের আন্দোলন সহ বিভিন্ন আন্দোলনে ছাত্ররা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে।
ছাত্র সমাজকে কীভাবে আরো কার্যকরী করা যায়।
- শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন: শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার
মাধ্যমে ছাত্রদেরকে দেশপ্রেমিক, সৃজনশীল এবং সমাজসেবী করে গড়ে তোলা।
- সুযোগ সৃষ্টি: ছাত্রদেরকে তাদের মেধা ও দক্ষতা
প্রদর্শনের সুযোগ করে দেওয়া।
- নেতৃত্ব গুণাবলী বিকাশ: ছাত্রদের মধ্যে নেতৃত্ব গুণাবলী
বিকাশ করা।
- সামাজিক কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করা: ছাত্রদেরকে সামাজিক কর্মকাণ্ডে
উৎসাহিত করা।
ছাত্র সমাজ
একটি দেশের ভবিষ্যৎ। তাদেরকে দায়িত্বশীল, সচেতন এবং দেশপ্রেমিক করে গড়ে তুলতে হবে।
1971 সালে বৈশম্ব বিরধী ছাত্র আন্দলনের প্রধান সমন্বয়ক দের পরিচয় কি?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলতে সাধারণত বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের ছাত্র আন্দোলনগুলোকে বোঝায়, যেখানে শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। এসব আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নেতার ভূমিকা ছিল। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কিছু ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক বা নেতাদের মধ্যে আছেন।
১. ভাষা আন্দোলন (১৯৫২)
ভাষা আন্দোলনের
সময় ঢাকায় ছাত্র নেতারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে
রয়েছেন:
- গোলাম আজম: তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র
নেতা, যিনি ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
- কাজী গোলাম মাহবুব: ছাত্র ইউনিয়নের নেতা, যিনি ভাষা
আন্দোলনের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
- আবুল কাসেম: তৎকালীন ছাত্র নেতা ও ভাষা আন্দোলনের
সংগঠক।
২. ৬ দফা
আন্দোলন (১৯৬৬)
৬ দফা আন্দোলনের সময় ছাত্রসমাজের মধ্যে থেকে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
- তাজউদ্দীন আহমদ: ছাত্র নেতা এবং আওয়ামী লীগের
অন্যতম প্রধান নেতা, যিনি পরে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন।
- শেখ মুজিবুর রহমান: যিনি ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন
এবং এই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন।
৩. গণঅভ্যুত্থান (১৯৬৯)
১৯৬৯ সালের
গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র সমাজের নেতারা সক্রিয় ছিলেন:
- আসাদুজ্জামান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা,
যিনি এই আন্দোলনের সময় শহীদ হন।
- নূর-ই-আলম সিদ্দিকী: ছাত্র নেতা ও ছাত্রলীগের নেতা,
যিনি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন।
- রাশেদ খান মেনন: ছাত্র ইউনিয়নের নেতা এবং এই আন্দোলনের
অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক।
৪. মুক্তিযুদ্ধ
(১৯৭১)
মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্র নেতারা সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠনে নেতৃত্ব দেন।
- আবদুল কাদের সিদ্দিকী: মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ছাত্র নেতা
ও ‘কাদেরিয়া বাহিনী’র প্রধান।
- আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কাসেম: যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্র
নেতা হিসেবে ভূমিকা রাখেন।
বিভিন্ন সময়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিভিন্ন নেতা ও সমন্বয়ক সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। এদের ভূমিকা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
ডিজিটাল সাকসেস আইটির নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url