ওয়েব সাইট কি? What is website?

ওয়েব সাইট কি?

ওয়েবসাইট (Website) হল ইন্টারনেটে উপলব্ধ একটি বা একাধিক ওয়েব পেজের সংগ্রহ, যা সাধারণত একটি ডোমেইন নামের অধীনে থাকে। একটি ওয়েবসাইট বিভিন্ন তথ্য, সেবা, পণ্য, ব্লগ পোস্ট, ভিডিও, ছবি এবং আরও অনেক কিছু প্রদান করতে পারে। প্রতিটি ওয়েবসাইটের একটি নির্দিষ্ট ঠিকানা থাকে, যাকে URL (Uniform Resource Locator) বলা হয়, যা ব্রাউজারে টাইপ করলে সেই ওয়েবসাইটটি দেখা যায়। 

উদাহরণস্বরূপ, www.google.com একটি ওয়েবসাইট যেখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের অনুসন্ধান করতে পারেন।

ওয়েবসাইট তৈরির জন্য কি কি লাগে?

ওয়েবসাইট তৈরির জন্য নিচের বিষয়গুলো প্রয়োজনঃ

1. ডোমেইন নাম (Domain Name)

ওয়েব সাইটের ঠিকানা, যেমন www.example.com। এটি ব্যবহারকারীরা আপনার সাইটে পৌঁছানোর জন্য ব্যবহার করবে।

2. হোস্টিং সার্ভার (Web Hosting)

ওয়েব সাইটের ফাইলগুলো সংরক্ষণ ও ইন্টারনেটে ব্যবহারকারীদের কাছে প্রদর্শনের জন্য একটি সার্ভার প্রয়োজন, যা ওয়েব হোস্টিং সার্ভিস প্রদান করে।

3. ওয়েবসাইট ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট  

HTML, CSS, এবং JavaScript এগুলো হলো ওয়েবসাইটের মূল ভাষা, যা ওয়েবসাইটের স্ট্রাকচার, ডিজাইন এবং ইন্টারেকটিভ ফিচার তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।

CMS (Content Management System) ওয়ার্ডপ্রেস, জুমলা, ড্রুপাল ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সহজেই ওয়েবসাইট তৈরি ও পরিচালনা করা যায়।

4. ডাটাবেস (Database) 

যদি আপনার ওয়েবসাইটে তথ্য সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়, যেমন ব্যবহারকারীর তথ্য, পণ্য তথ্য ইত্যাদি, তাহলে একটি ডাটাবেস প্রয়োজন হবে। MySQL, PostgreSQL ইত্যাদি জনপ্রিয় ডাটাবেস সফটওয়্যার।

5. SSL সার্টিফিকেট  

এটি ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি নিশ্চিত করে এবং ব্যবহারকারীর তথ্য এনক্রিপ্ট করে রাখে। HTTPS প্রোটোকল ব্যবহার করতে এটি প্রয়োজন।

6. কন্টেন্ট (Content)

ওয়েব সাইটে যে তথ্য বা উপাদানগুলো থাকবে, যেমন লেখা, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি, সেগুলো প্রস্তুত করতে হবে।

7. SEO (Search Engine Optimization)

আপনার ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে সঠিকভাবে র‍্যাঙ্ক করার জন্য SEO প্রয়োজন। এটি ওয়েবসাইটের ভিজিবিলিটি বাড়াতে সাহায্য করে।

8. ডেভেলপমেন্ট টুলস

আরো পড়ূনঃ ফেজবুক অ্যাডে AB টেষ্ট কি?

ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের জন্য বিভিন্ন টুল এবং সফটওয়্যার প্রয়োজন হতে পারে, যেমন কোড এডিটর (VS Code, Sublime Text), ফটো এডিটিং টুলস (Photoshop, GIMP), ইত্যাদি।

এই উপাদানগুলো একত্রে ব্যবহার করে আপনি একটি সম্পূর্ণ ও কার্যকরী ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন।

ডোমেন কি?

ডোমেন (Domain) হলো একটি ওয়েবসাইটের অনন্য নাম বা ঠিকানা, যা ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেটে ব্রাউজারে টাইপ করে সেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারেন। এটি সাধারণত ইন্টারনেটে ওয়েবসাইটের পরিচয় হিসেবে কাজ করে। একটি ডোমেন নাম সাধারণত দুটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত:

1. ডোমেন নাম 

 এটি হলো ওয়েবসাইটের মূল নাম, যেমন "example"।

2. টপ-লেভেল ডোমেন (TLD)

এটি ডোমেন নামের শেষে থাকে, যেমন ".com", ".org", ".net", ".bd" ইত্যাদি।

উদাহরণস্বরূপ, "www.google.com" একটি ডোমেন নাম যেখানে "google" হলো ডোমেন নাম এবং ".com" হলো TLD।

ডোমেন নামটি ওয়েবসাইটের আইপি ঠিকানাকে একটি সাধারণ এবং সহজে মনে রাখার মতো ফর্ম্যাটে রূপান্তর করে, যাতে ব্যবহারকারীরা সহজেই ওয়েবসাইটটি অ্যাক্সেস করতে পারেন।

হোস্টিং কি?

হোস্টিং (Hosting) হলো একটি পরিষেবা যা ওয়েবসাইটের ফাইল ও ডেটা ইন্টারনেটে সংরক্ষণ এবং প্রদর্শন করার জন্য সার্ভার সরবরাহ করে। যখন আপনি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেন, সেই ওয়েবসাইটের ফাইল, ছবি, ডেটাবেস এবং অন্যান্য তথ্য ইন্টারনেটে অ্যাক্সেসযোগ্য করার জন্য একটি সার্ভারে রাখতে হয়। এই সার্ভারটি সাধারণত হোস্টিং পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত হয়।

হোস্টিং সার্ভিসের কয়েকটি প্রকার

1. শেয়ার্ড হোস্টিং (Shared Hosting)

এই ধরনের হোস্টিংয়ে একাধিক ওয়েবসাইট একটি সার্ভার শেয়ার করে। এটি সাধারণত সস্তা এবং ছোট ওয়েবসাইটের জন্য উপযুক্ত।

2. ভিপিএস হোস্টিং (VPS Hosting)

ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার (VPS) হোস্টিংয়ে, একটি শারীরিক সার্ভারকে ভার্চুয়ালাইজ করে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। প্রতিটি ভাগের নিজস্ব রিসোর্স থাকে, যা প্রায় নিজের সার্ভারের মতো।

3. ডেডিকেটেড হোস্টিং (Dedicated Hosting)

এখানে একটি পুরো সার্ভার শুধুমাত্র একটি ওয়েবসাইটের জন্য বরাদ্দ থাকে। এটি বড় ও উচ্চ ট্র্যাফিক ওয়েবসাইটের জন্য উপযুক্ত এবং বেশ ব্যয়বহুল।

4. ক্লাউড হোস্টিং (Cloud Hosting)

ক্লাউড হোস্টিংয়ে আপনার ওয়েবসাইটের ডেটা একাধিক সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়, যা প্রয়োজন অনুযায়ী রিসোর্স প্রদান করে। এটি বেশ ফ্লেক্সিবল এবং স্কেলেবল।

5. ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং (WordPress Hosting) 

এটি একটি বিশেষায়িত হোস্টিং সার্ভিস, যা ওয়ার্প্রেসে তৈরি ওয়েবসাইটের জন্য অপটিমাইজ করা হয়েছে।

এই হোস্টিং পরিষেবাগুলোর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটটি ইন্টারনেটে সর্বজনীনভাবে প্রবেশযোগ্য হয়। হোস্টিং ছাড়া, আপনার ওয়েবসাইটটি ইন্টারনেটে দেখা যাবে না।

কিভাবে ডোমিন হোস্টিং সিলেক্ট করব?

ডোমেইন এবং হোস্টিং নির্বাচন করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা উচিত। নিচে ডোমেইন এবং হোস্টিং সিলেক্ট করার ধাপগুলো দেওয়া হলোঃ

 ডোমেইন নির্বাচন

1. ব্যবহারকারী-বান্ধব নাম নির্বাচন

আপনার ডোমেইন নামটি সহজে মনে রাখার মতো এবং টাইপ করা সহজ হওয়া উচিত। দীর্ঘ বা জটিল নাম পরিহার করা উচিত।

2. আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত

ডোমেইন নামটি আপনার ব্যবসা বা ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কিত হওয়া উচিত। এটি ব্যবহারকারীদের জন্য আরও প্রাসঙ্গিক এবং স্মরণীয় হবে।

3. টপ-লেভেল ডোমেইন (TLD) নির্বাচন

 সাধারণত .com, .org, .net-এর মতো জনপ্রিয় TLDs ব্যবহার করা হয়। তবে, আপনার ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী .bd, .shop, .tech, .info ইত্যাদি বিশেষ TLDsও বেছে নিতে পারেন।

4. ব্র্যান্ডিং  

আপনার ডোমেইন নামটি এমনভাবে নির্বাচন করুন যাতে এটি ব্র্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এটি অন্যদের থেকে আলাদা এবং ইউনিক হওয়া উচিত।

5. উপলব্ধতা যাচাই করুন  

আপনি যে ডোমেইন নামটি চান, তা উপলব্ধ কিনা তা চেক করুন। ডোমেইন রেজিস্ট্রার ওয়েবসাইটে এটি পরীক্ষা করা যায়। যদি আপনার পছন্দের নামটি উপলব্ধ না থাকে, তবে একটু পরিবর্তন করে বা অন্য TLD ব্যবহার করে চেষ্টা করুন।

হোস্টিং নির্বাচন

আরো পড়ূনঃ কোন অ্যাড কখন পরিচালনা করা হয়?

1. ওয়েবসাইটের প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন  

আপনার ওয়েবসাইটের আকার, ট্র্যাফিকের পরিমাণ, এবং যে ধরনের কন্টেন্ট থাকবে তা নির্ধারণ করুন। এই প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে হোস্টিং প্ল্যান বেছে নিন।

2. শেয়ার্ড বনাম ডেডিকেটেড বনাম ক্লাউড হোস্টিং

 শেয়ার্ড হোস্টিং: ছোট এবং নতুন ওয়েবসাইটের জন্য সাশ্রয়ী।

 ডেডিকেটেড হোস্টিং: উচ্চ ট্র্যাফিক বা বিশেষজ্ঞ নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন এমন বড় ওয়েবসাইটের জন্য ভালো।

ক্লাউড হোস্টিং: স্কেলেবল এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল ট্র্যাফিকের জন্য উপযুক্ত।

3. আপটাইম এবং রিলায়েবিলিটি

একটি নির্ভরযোগ্য হোস্টিং প্রদানকারী বেছে নিন যা উচ্চ আপটাইম (99.9% বা তার বেশি) গ্যারান্টি দেয়। আপনার ওয়েবসাইট সবসময় অ্যাক্সেসযোগ্য হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

4. কাস্টমার সাপোর্ট

হোস্টিং প্রদানকারীর ২৪/৭ কাস্টমার সাপোর্ট থাকা উচিত। এটি সমস্যা সমাধানে দ্রুত সহায়তা করবে।

5. ব্যাকআপ এবং সিকিউরিটি  

সঠিক ব্যাকআপ এবং সিকিউরিটি ফিচার প্রস্তাব করে এমন একটি হোস্টিং প্ল্যান নির্বাচন করুন। SSL সার্টিফিকেট, ফায়ারওয়াল, ডিডোস প্রোটেকশন ইত্যাদি বিবেচনায় রাখুন।

6. প্ল্যানের খরচ এবং রিনিউয়াল ফি  

হোস্টিং প্ল্যানের খরচ এবং রিনিউয়াল ফি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিন। অনেক কোম্পানি প্রাথমিকভাবে কম দাম অফার করে, কিন্তু রিনিউয়ালে বেশি চার্জ করে।

7. রিভিউ এবং রেটিং

হোস্টিং কোম্পানির রিভিউ এবং রেটিং দেখে নিতে পারেন। এটি আপনাকে সেই কোম্পানির সার্ভিস সম্পর্কে ভালো ধারণা দেবে।

ডোমেইন এবং হোস্টিং নির্বাচন করার সময় এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিলে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য সঠিক সেবা বেছে নিতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল সাকসেস আইটির নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪