বর্ষার পানিতে বাংলাদেশের কয়টি জেলা প্লাবিত হয়?
বর্ষার পানিতে বাংলাদেশের কয়টি জেলা প্লাবিত হয়?
বর্ষার পানিতে প্রতি বছর সাধারণত বাংলাদেশের প্রায় ৩০-৩৫টি জেলা প্লাবিত হয়। তবে বন্যার মাত্রা এবং প্লাবিত জেলার সংখ্যা প্রতি বছর ভিন্ন হতে পারে। কিছু জেলায় বেশি বন্যা হয় এবং কিছু জেলায় কম। বর্ষা মৌসুমে প্রধানত উত্তর-পূর্ব, উত্তর-পশ্চিম এবং মধ্যাঞ্চলের কিছু জেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলের কয়টি জেলা বর্ষায় প্লাবিত হয়?
বাংলাদেশের
উত্তর অঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা বর্ষায় নিয়মিতভাবে প্লাবিত হয়। সাধারণত, এই এলাকাগুলোতে
প্লাবিত হওয়া জেলা সংখ্যা প্রায় ৮-১০টি হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জেলাগুলি
হলো।
- কুড়িগ্রাম
- লালমনিরহাট
- রংপুর
- গাইবান্ধা
- নীলফামারী
- দিনাজপুর
- পঞ্চগড়
- ঠাকুরগাঁও
- জামালপুর
- শেরপুর
এই
জেলাগুলি বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় কোন জেলাতে?
বাংলাদেশের উত্তর অঞ্চলে বর্ষার বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি সাধারণত কুড়িগ্রাম জেলায় হয়। কুড়িগ্রাম জেলা ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত এবং এখানে বন্যার পানি দীর্ঘস্থায়ী হয়, ফলে কৃষি, ঘরবাড়ি এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়াও, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলাতেও বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। এই জেলাগুলির নিচু এলাকা এবং নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
এই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার উপায় কি?
বন্যার ক্ষতির হাত থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। এর মধ্যে কিছু কার্যকর উপায় হলো।
১. অবকাঠামো উন্নয়নঃ
- বাঁধ
ও বাঁধনির্মাণ:
শক্তিশালী বাঁধ ও বাঁধনির্মাণ করে নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করা।
- নদীর
ড্রেজিং: নদীর
গভীরতা বাড়িয়ে পানি প্রবাহের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
- বন্যা
নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো:
জলাধার, রিজার্ভার এবং ক্যানাল নির্মাণ করে বন্যার পানি সঞ্চয় করা।
২. কৃষি ব্যবস্থাপনাঃ
- বন্যা-সহনশীল
ফসল: বন্যা-সহনশীল
ধানের জাত এবং অন্যান্য ফসল চাষ করা।
- ফসলের
সময়সূচি পরিবর্তন:
ফসলের চাষের সময়সূচি পরিবর্তন করে বন্যার সময়কাল এড়িয়ে চাষ করা।
৩. সতর্কতা ও প্রস্তুতিঃ
- আবহাওয়া
পূর্বাভাস: বন্যার
পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন।
- সচেতনতা
বৃদ্ধি: জনগণকে
বন্যার পূর্বাভাস সম্পর্কে সচেতন করা এবং প্রস্তুত থাকার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া।
৪. পুনর্বাসন ও সাহায্যঃ
- জরুরি
সেবা: বন্যার সময়
জরুরি খাদ্য, পানি, ও চিকিৎসা সরবরাহের ব্যবস্থা।
- পুনর্বাসন: বন্যার পর ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের
জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ।
৫. দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাঃ
- নগর
পরিকল্পনা: শহর
এবং গ্রামগুলোর পরিকল্পনা এমনভাবে করা যাতে বন্যার প্রভাব কম হয়।
- প্রাকৃতিক
বনায়ন: নদীর তীরে
এবং অন্যান্য এলাকায় বৃক্ষরোপণ করে মাটির ক্ষয় রোধ করা।
এই
পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করে বন্যার ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।
এখানে সরকার কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে?
সরকার বন্যার ক্ষতি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নিচে কিছু প্রধান ক্ষেত্র তুলে ধরা হলো যেখানে সরকারের ভূমিকা অপরিহার্য।
১. অবকাঠামো উন্নয়নঃ
- বাঁধ
ও বাঁধনির্মাণ:
সরকার নদীর তীরবর্তী এলাকায় শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ করতে পারে এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের
জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করতে পারে।
- নদীর
ড্রেজিং: সরকার
নদী খনন ও ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে যাতে নদীর প্রবাহমানতা বৃদ্ধি
পায় এবং বন্যার পানি দ্রুত নিষ্কাশন হয়।
২. পরিকল্পনা ও নীতি নির্ধারণঃ
- বন্যা
নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা:
দীর্ঘমেয়াদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারে, যেখানে
সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়।
- জলবায়ু
পরিবর্তন মোকাবিলা:
সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল অবকাঠামো
ও প্রযুক্তি উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে পারে।
৩. ত্রাণ ও পুনর্বাসনঃ
- জরুরি
ত্রাণ সরবরাহ:
বন্যার সময় ত্রাণ কার্যক্রম দ্রুত ও সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে, যেমন খাদ্য,
পানি, ঔষধ, এবং আশ্রয় প্রদান।
- পুনর্বাসন
পরিকল্পনা: বন্যা
পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে,
যেমন বাড়ি মেরামত, নতুন বসতি স্থাপন এবং কৃষি পুনর্বাসন।
৪. সচেতনতা ও প্রশিক্ষণঃ
- সচেতনতা
কর্মসূচি: জনগণের
মধ্যে বন্যা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা চালাতে পারে এবং বন্যার পূর্বাভাস
সম্পর্কে তাদের অবহিত করতে পারে।
- প্রশিক্ষণ
ও মহড়া: জনগণকে
বন্যা মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ প্রদান এবং মহড়ার মাধ্যমে প্রস্তুত রাখতে পারে।
৫. প্রযুক্তি ও তথ্য ব্যবস্থাপনাঃ
- আবহাওয়া
পূর্বাভাস ব্যবস্থা:
উন্নত আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং সতর্কীকরণ ব্যবস্থা স্থাপন করতে পারে যা সময়মত
বন্যার পূর্বাভাস দিতে সক্ষম।
- তথ্য
সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ:
বন্যার তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
৬. অর্থনৈতিক সহায়তাঃ
- আর্থিক
সহায়তা: ক্ষতিগ্রস্ত
কৃষক ও ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে পারে যাতে তারা পুনরায় তাদের
জীবনযাত্রা শুরু করতে পারে।
- স্বল্পমেয়াদী
ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ:
সরকার স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে পারে যা বন্যার
পর ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে পারে।
সরকারের
সক্রিয় ভূমিকা ও কার্যকর পরিকল্পনার মাধ্যমে বন্যার ক্ষতি কমানো এবং জনগণের জীবনযাত্রার
মান উন্নত করা সম্ভব।
এবছর বর্ষার কারণে ক্ষতির পরিমাণ কি রকম?
এবছর
বর্ষার কারণে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিশেষ করে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় ব্যাপক
ক্ষতি হয়েছে। প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় প্রায় ১.৪ মিলিয়ন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
হয়েছে। অনেক বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়েছে, ফসল নষ্ট হয়েছে এবং বহু মানুষ তাদের ঘরবাড়ি
থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) ক্ষতিগ্রস্তদের
সাহায্য করছে এবং ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
দশ বছরের রেশিওতে সর্বোচ্চ বর্ষা কত সালে?
গত দশ বছরে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বর্ষা হয়েছে ২০২২ সালে। সিলেট অঞ্চলে ২০২২ সালে রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে যা সর্বোচ্চ বর্ষণ হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। ওই বছরে মাত্র একদিনে ৩০৩.৮ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছিল, যা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে অনেক বেশি ছিল।
বর্ষা
মৌসুমে বাংলাদেশে বন্যা, ভূমিধস এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে
বাঁচার জন্য কিছু করণিয়।
1.
পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন: জলাবদ্ধতা প্রতিরোধ করতে ভালো পানি নিষ্কাশন
ব্যবস্থা তৈরি করা।
2.
বন্যা পূর্বাভাস এবং সতর্কতা ব্যবস্থা: আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সঠিক সময়ে
বন্যার পূর্বাভাস দেওয়া এবং মানুষকে সতর্ক করা।
3.
উঁচু স্থানে আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ: বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের জন্য উঁচু স্থানে
আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা।
4.
গাছপালা রোপণ: মাটির ক্ষয় রোধ করতে এবং ভূমি শক্তিশালী করতে বেশি করে গাছপালা
রোপণ করা।
5.
বন্যা সহনশীল ফসল চাষ: বন্যা সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন এবং চাষ করা।
সরকার
এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বন্যার ক্ষতি কমাতে
পারে। ত্রাণ কার্যক্রম, স্বাস্থ্যসেবা এবং পুনর্বাসন কর্মসূচি পরিচালনা করাও জরুরি।
ডিজিটাল সাকসেস আইটির নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url