গ্যাস্টিকের সমস্যা হলে কি হয়? এর চিকিৎসা কি?

গ্যাস্টিকের সমস্যা হলে কি হয়?

গ্যাস্টিকের সমস্যা হলে বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। গ্যাস্ট্রাইটিস বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল সমস্যা সাধারণত পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপন্ন হওয়ার কারণে ঘটে। কিছু সাধারণ উপসর্গ নিচে দেওয়া হলোঃ

  • বুক জ্বালাপোড়ঃ পাকস্থলীর অ্যাসিড উপরে উঠে এসে বুকের মাঝখানে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে।
  • পেট ফাঁপাঃ অতিরিক্ত গ্যাস জমে পেট ফুলে যায় বা অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যঃ হজম প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হলে পেট খারাপ বা মলত্যাগে সমস্যা হতে পারে।
  • বমি বমি ভাবঃ পাকস্থলীর অ্যাসিড বাড়তি হয়ে গেলে বমি বমি ভাব বা প্রকৃত বমি হতে পারে।
  • পেট ব্যথাঃ সাধারণত পেটের উপরের দিকে ব্যথা অনুভূত হয়।
  • ডাকার সমস্যাঃ খাবার পর বারবার ডাকার প্রবণতা বেড়ে যায়।
  • ক্ষুধামন্দাঃ অতিরিক্ত গ্যাস বা অম্বলের কারণে ক্ষুধা কমে যেতে পারে।

গ্যাস্টিকের সমস্যা হলে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত এবং খাবার-দাবারে কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত তাহলে হয়ত বা অনেকটা ভাল থাকা সম্ভাব।আর খাবার মেনুটা পরিবর্তন করতে হবে। যেমনঃ

  • মসলাযুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
  • অতিরিক্ত চা, কফি বা কার্বোনেটেড পানীয় পান না করা পরিহার করতে হবে।
  • ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করতে হবে।
  • সময়মতো খাদ্য গ্রহণ করা এবং বেশি রাত জেগে না থাকা চেষ্টা করা।

যদি সমস্যাগুলি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা গুরুতর হয়, তাহলে দ্রুত একজন রেজিষ্টার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে কি করবেন?

  • ডাক্তারের পরামর্শঃ উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনটি দেখা দিলে দ্রুত একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। ডাক্তার আপনার লক্ষণ, রোগ ব্যাপারী এবং চিকিৎসা ইতিহাস বিশ্লেষণ করে সঠিক রোগ নির্ণয় করবেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেবেন।
  • জীবনযাত্রার পরিবর্তনঃ নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা, মানসিক চাপ কমানো ইত্যাদি জীবনযাত্রার পরিবর্তন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা প্রতিরোধে ও চিকিৎসায় সহায়ক।
  • ওষুধ সেবনঃ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করুন।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা প্রতিরোধ পাওয়ার জন্য দৈনন্দিন খাদ্য অভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা অনেক জরুরি তবেই ভাল থাকা সম্ভাব।

নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান।  

  • ছোট ছোট করে বারবার খাবার খান।
  • তেল-মশলাযুক্ত, ঝাল, বা চর্বিযুক্ত খাবার কম খান।
  • শাকসবজি, ফলমূল, ও আঁশযুক্ত খাবার বেশি খান।
  • বাজারজাত খাবার, ফাস্টফুড, ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

  • প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।

প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

  • প্রতিদিন ৩০ মিনিট নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

গ্যাস্টিকের সমস্যা হলে কোন ডাক্তার দেখাব?



গ্যাস্টিকের সমস্যা হলে সাধারণত গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট (Gastroenterologist) এর পরামর্শ নেওয়া উচিত। গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট হলেন এমন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যিনি হজম প্রক্রিয়া, পাকস্থলী, অন্ত্র, এবং লিভারের সমস্যা নিয়ে কাজ করেন।

তবে শুরুতে আপনি সাধারণ কোনো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বা ইন্টারনাল মেডিসিন ডাক্তার (Internal Medicine Doctor) এর কাছেও পরামর্শ নিতে পারেন। তারা প্রাথমিকভাবে আপনার সমস্যা নির্ণয় করে প্রয়োজন হলে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের কাছে রেফার করবেন।

আপনার কাছে কিছু উপায় দেওয়া হলো যেগুলোর মাধ্যমে আপনি সঠিক চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন। তবে রোগের ধারণের উপর নির্ভর ডাক্তারের কাছে যাওয়া ভাল।

  • মেডিসিন বিশেষজ্ঞঃ যদি আপনার গ্যাস্ট্রিক সমস্যা খুব গুরুতর না হয়, তবে আপনি প্রথমে একজন সাধারণ মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
  • গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ঃ: গ্যাস্ট্রিক সমস্যা গুরুতর হলে বা দীর্ঘমেয়াদী হলে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের পরামর্শ নিন।

সঠিক চিকিৎসক বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয় অবশ্যয় মনে রাখতে হবে।নিম্নে কিছু টিপস দেওয়া হল।

  • পরিচিত কারও কাছ থেকে সুপারিশ নেওয়া।
  • ডাক্তারের যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা যাচাই করা।
  • হাসপাতাল বা ক্লিনিঃ প্রথিতযশা হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করার চেষ্টা করুন। সেগুলোর মান এবং সেবার মান সাধারণত ভালো হয়ে থাকে।
  • লোকাল হাসপাতালঃ আপনি আপনার আশেপাশের পরিচিত লোকদের কাছ থেকে ভালো হাসপাতালের সুপারিশ নিতে পারেন।
  • এছাড়া, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য প্রাথমিকভাবে আপনি কিছু ওষুধ খেতে পারেন যেমন অ্যান্টাসিড, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী বা গুরুতর সমস্যার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অপরিহার্য।

 সঠিক চিকিৎসক বেছে নেওয়ার জন্য নিচের কিছু টিপস অনুসরণ করতে পারেন:

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার বিষয়।

  • প্রতিশংসাপত্র এবং সার্টিফিকেশঃ চিকিৎসকের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট যাচাই করুন।
  • অভিজ্ঞতাঃ চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা এবং কাজের পরিসর সম্পর্কে জানুন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সাধারণত বেশি ভালো ফল দেয়।

রোগীর মতামত ও পর্যালোচনা করা ।

  • অনলাইন রিভিউঃ বিভিন্ন মেডিকেল রিভিউ সাইট বা হাসপাতালের ওয়েবসাইটে রোগীদের মতামত পড়ুন।
  • পরিচিত ব্যক্তির পরামর্শঃ আপনার পরিবার, বন্ধু বা পরিচিত ব্যক্তিরা যদি কোনো চিকিৎসকের ভালো অভিজ্ঞতা শেয়ার করে, সেটাও কাজে লাগতে পারে।

ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ ও সহজলভ্যতা।

  • অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়াঃ চিকিৎসকের কাছে সহজে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায় কিনা যাচাই করুন।
  • যোগাযোগঃ চিকিৎসক সহজলভ্য এবং রোগীর সঙ্গে ভালোভাবে যোগাযোগ স্থাপন করেন কিনা দেখুন।

চিকিৎসকের চিকিৎসা পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনা পত্র।

  • রোগীর সাথে যোগাযোগঃ চিকিৎসক রোগীর সমস্যার কথা ধৈর্য সহকারে শোনেন এবং পরিষ্কারভাবে তার রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন কিনা তা গুরুত্বপূর্ণ।
  • ফলো-আপ সেবাঃ চিকিৎসক পরবর্তী ফলো-আপ এবং কেয়ার সম্পর্কে কতটা যত্নবান সেটা দেখুন

একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে যাওয়া।

  • যদি প্রাথমিকভাবে মেডিসিন বিশেষজ্ঞের কাছে যান, তাহলে তারা প্রয়োজন হলে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট বা অন্য কোন বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করতে পারেন।

এই টিপসগুলো অনুসরণ করলে আপনি সঠিক এবং দক্ষ চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারবেন।

কিছু ঘরয়া পদ্ধীতে গ্যাস্টিকের সমাধান?

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নিরসনে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি প্রয়োগ করে আপনি স্বস্তি পেতে পারেন। এখানে কিছু কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিকার দেওয়া হলো:
১. আদা
উপকারিতা: আদা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়।
প্রয়োগ: এক টুকরো তাজা আদা চিবিয়ে খান বা আদা চা বানিয়ে পান করুন। আদার টুকরো গরম পানিতে দিয়ে কয়েক মিনিট ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করতে পারেন।

. পুদিনা পাতা 
উপকারিতা: পুদিনা পাতা হজমে সহায়তা করে এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়।
প্রয়োগ: কয়েকটি তাজা পুদিনা পাতা চিবিয়ে খান বা পুদিনা চা বানিয়ে পান করুন।

. লেবু পানি

উপকারিতা: লেবু পানি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।
প্রয়োগ: এক গ্লাস গরম পানিতে অর্ধেক লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।

. জিরা

উপকারিতা: জিরা হজমে সহায়তা করে এবং গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
প্রয়োগ: এক চা চামচ জিরা গরম পানিতে দিয়ে কিছুক্ষণ ফোটান। এরপর ছেঁকে সেই পানি পান করুন।

. দারুচিনি

উপকারিতা: দারুচিনি হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং গ্যাসের সমস্যা কমায়।
প্রয়োগ: এক কাপ গরম পানিতে অল্প দারুচিনি গুঁড়ো মিশিয়ে পান করুন।

. হজম সহায়ক খাবার

দই: প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ দই হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
ফল: পেঁপে, কলা এবং তরমুজ হজমে সহায়তা করে।

. গরম পানি


উপকারিতা: গরম পানি হজম প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক করে এবং গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
প্রয়োগ: খাবারের পর এক গ্লাস গরম পানি পান করুন।

. যোগব্যায়াম শারীরিক ব্যায়াম

উপকারিতা: যোগব্যায়াম ও শারীরিক ব্যায়াম হজমশক্তি উন্নত করে এবং গ্যাসের সমস্যা কমাতে সহায়তা করে।
প্রয়োগ: প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম করুন, যেমন- ভাজ্রাসন, পবনমুক্তাসন ইত্যাদি।

এছাড়া, কিছু সাধারণ সতর্কতা মেনে চললে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমে যেতে পারে, যেমন:

  • খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাওয়া।
  • অতিরিক্ত মশলাযুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার পরিহার করা।
  • বেশি রাত জেগে না থাকা এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া।
  • অতিরিক্ত চা, কফি বা কার্বোনেটেড পানীয় এড়িয়ে চলা।

এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে। তবে সমস্যাটি যদি গুরুতর হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল সাকসেস আইটির নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪