কুরবানি দেওয়ার সঠিক নিয়ম কি? ২০২৪ সালের কুরবানির তারিখ?
২০২৪ সালের কুরবানি।
কুরবানি হলো ইসলামিক ধর্মে একটি প্রধান ধর্মীয় উপাসনার রীতি ও প্রক্রিয়া মধ্যে একটি। এটি ঈদ-উল-আযহা নামেও পরিচিত আমাদের সমাজে। ইসলামের একটি প্রধান উপলক্ষ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টিকরণ ও মানবিক সহানুভূতির প্রতীক হিসাবে ঈদ-উল-আযহা।ঈদ-উল-আযহা দিনে মুসলিম সমাজের বেশিরভাগ মানুষ গরু, ভাড়া বা ছাগল কুরবানি করে তাকে ও তাদের মাংস ভাগ করে সাহায্যকারী ব্যক্তিদের এবং দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করেন। এটি ধর্মীয় অবস্থার পাশাপাশি সামাজিক ও নৈতিক উন্নতির একটি মাধ্যম হিসাবে পরিগণিত হয়।
কুরবানির উদ্দেশ্য কি?
- আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাঃ আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যেসব নিয়ামত দান করেছেন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য কুরবানি করা হয়ে থাকে।
- আত্মত্যাগঃ আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও আত্মসমর্পণের প্রতীক হিসেবে নিজের প্রিয় জিনিস, যেমন পশু, উৎসর্গ করায় হল কুরবানি।
- গরিবদের সাহায্যকরাঃ কুরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করে এক ভাগ নিজেদের জন্য, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনের জন্য এবং এক ভাগ গরিবদের জন্য বিতরণ করা হয়।
- পাপের প্রায়শ্চিত্তঃ কুরবানি পাপের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে কাজ করে।
কুরবানির সময় কয়দিন?
কুরবানি ঈদুল আযহার দিন, অর্থাৎ জিলহজ মাসের ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কুরবানি করার নিয়ম আছে।
কুরবানির পশুগুলি কি কি?
কুরবানির জন্য উট, গরু, ছাগল বা ভেড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। পশু সুস্থ, সবল, বয়স ওঠা এবং কোনো দোষ-ত্রুটিমুক্ত হতে হবে এটাই কুরবানির শত্য।
কুরবানি করার নিয়ম কি?
- পশু কুরবানি করার সময় নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম কানিন মেনে কুরবানি করতে হয়। যেমন:
- কুরবানির পশু জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে হবে।
- পশু জবাই করার সময় ছুরি তীক্ষ্ণ থাকতে হবে এবং দ্রুত জবাই করতে হবে।
- জবাই করার পর পশুর চামড়া, মাংস ও হাড় আলাদা করতে হবে।
- মাংস তিন ভাগ করে ভাগ করে বিতরণ করতে হবে।
ইসলামে কুরবানির গুরুত্ব।
কুরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি মুসলিমদের ঈমান ও আত্মত্যাগের পরিচয়। কুরবানি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, গরিবদের সাহায্য এবং পাপের প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে মুসলিমদের আধ্যাত্মিক উন্নয়নে সহায়তা করে।
কুরআন ও হাদিসে কুরবানি সম্পর্কে কি বলে?
আর হাদিসে প্রধানত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:"যে ব্যক্তি এই দিনে সকল মুসলিমের মধ্যে কোন প্রাণী সম্মানিত করে এবং পশু কুরবানী করে, তার জন্য যে পরিমাণ পুরস্কার আল্লাহ কর্তা নিয়ে আনতে পারে, সে যে কোন অন্য দিনে তা করতে পারবে না।" [সহীহ বুখারি, মুসলিম]
কুরআনে কুরবানি সম্পর্কে যা বলা হয়।
- কুরবানির আদেশঃ সূরা হজ্বের 37 নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্পষ্টভাবে কুরবানির আদেশ দিয়েছেন।
- কুরবানির উদ্দেশ্যঃ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, তাকওয়া ও ঈমানের প্রমাণ, দরিদ্রদের সাহায্য করা (সূরা হজ্ব: 37, বাকারা: 196)।
- কুরবানির নিয়মঃ কুরআনে কুরবানির পশুর বয়স, স্বাস্থ্য, ধরন ইত্যাদি বিষয়ে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে (সূরা হজ্ব: 36)।
- কুরবানির গোশতের বন্টনঃ কুরবানির এক তৃতীয়াংশ নিজেদের জন্য, এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ দরিদ্রদের জন্য বিতরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে (সূরা হজ্ব: 28)।
হাদিসে কুরবানি সম্পর্কে যা বলা হয়।
- কুরবানির গুরুত্বঃ হাদিসে কুরবানিকে ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
- নবীর (সাঃ) কুরবানিঃ হাদিস থেকে জানা যায়, নবী (সাঃ) প্রতি বছর কুরবানি করতেন এবং তার সঙ্গীদেরও উৎসাহিত করতেন (সহীহ বুখারী)।
- কুরবানির সুযোগঃ হাদিসে বলা হয়েছে, কুরবানির দিনে আল্লাহ তাআলা জান্নাতের দরজা খুলে দেন এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন (সহীহ তিরমিযি)।
- কুরবানির ফজিলতঃ হাদিসে কুরবানির অনেক ফজিলত ও বরকতের কথা বর্ণিত হয়েছে (সহীহ মুসলিম)।
আরো পড়ূনঃ২০২৪ সালের ফিতরা কত?কাদের ফিতরা দিব?
কুরআন ও হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, কুরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, তাকওয়া ও ঈমানের প্রমাণ, দরিদ্রদের সাহায্য করার মাধ্যম। ঈদের আনন্দ উদযাপন এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য মুসলিমদের উচিত নিয়মিতভাবে কুরবানি করা।
কুরবানি কাদের উপর ফরজ?
কুরবানি ইসলামে সালাতের পাঁচটি প্রধান ওয়াজিব এর মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচিত হয়। ইসলামী শরীয়াতে নিয়মিত আচরণের জন্য এটি বাধ্যতামূলক হিসেবে গণ্য হয়। কুরবানি ইসলামের একটি প্রধান সংস্কার, যা মুসলিম সমাজে একটি ধর্মীয় ও সামাজিক অবস্থা হিসেবে গণ্য হয়।
ইসলামী শরীয়াতে অনেক প্রকার সাদাকা ও কর্মকাণ্ডের প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন নিয়ম এবং কর্মকাণ্ডের স্বাধীন উল্লেখ রয়েছে, যেমন সালাত, রোজা, হজ্জ ইত্যাদি। কুরবানি এই সাদাকার মধ্যে একটি প্রধান অংশ। এটি সালাতের মত প্রধান হিসেবে প্রয়োজনীয়। এটির অধিকাংশ ইসলামিক ফিক্সিংস এ একটি প্রধান বিষয়। বিশেষত, এটি ঈদ-উল-আযহা পর্বে সালাতের সাথে অপরিহার্যভাবে সম্পর্কিত।
ইসলামে, কুরবানি সুন্নত-ই মুয়াক্কাদাহ বলে বিবেচিত হয়, যার মানে হলো এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত এবং প্রায় ওয়াজিবের মতো।
যাদের উপর কুরবানি ওয়াজিব করা হয়েছে?
- প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমঃ যারা বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন এবং ইসলামের নিয়ম-কানুন মেনে চলে।
- চনিসাব পরিমাণ সম্পদঃ যাদের কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে। নিসাব হলো 52.5 ভরি রুপার মূল্য বা সোনার 35 গ্রাম সমপরিমাণ সম্পদ।
কুরবানি কাদের কাদের উপর ওয়াজিব নয়।
- অপ্রাপ্তবয়স্কঃ যারা বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন হয়নি।
- নি:স্ব মুসলিমঃ যাদের কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই।
- মুসাফিরঃ কুরবানির দিনে যারা মুসাফির থাকবে।
- পাগলঃ যারা মানসিকভাবে সুস্থ নয়।
- নারী-পুরুষ উভয়ের উপরেই সমানভাবে কুরবানি ওয়াজিব।
- যদি কোন ব্যক্তি কোন কারণে কুরবানি না করতে পারে, তাহলে তার উপর কুরবানির বদল প্রদান করা ওয়াজিব। কুরবানির বদল হলো একজন মিসকিনকে এক মাস খাওয়ানোর খাবার প্রদান করা।
কুরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে কেমন পশু নির্বাচন করব?
কুরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক পশু নির্বাচনের জন্য কিছু মৌলিক বিষয় রয়েছে নিম্নে সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হল।
- স্বাস্থ্যগত অবস্থাঃ পশুটি স্বাস্থ্যগতভাবে সুস্থ এবং বিনা রোগের হতে চাইবে। একটি সুস্থ পশু পরিস্থিতির সাথে মুক্তির দিনে ভাল খাবার খায়ে এবং উচ্চ মানের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্ত করে।
- বয়স ও ওজনঃ কুরবানির জন্য পশুটির বয়স ও ওজন দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিক বয়স এবং ওজনের পশু কুরবানির জন্য উপযোগী হবে যেন একটি প্রাকৃতিক এবং প্রত্যাশিত মাংস পরিমাণ উৎপন্ন করে।
- পশুর প্রকৃতিঃপশুটির স্বাভাবিক চরণ এবং আবাসন কার্যক্রম বিবেচনা করা প্রয়োজন। এটি পশুর স্বাস্থ্য এবং সানাক্ত জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- পশুর জাতঃ কুরবানির জন্য পশুর উৎস, জাত, রং, আকার এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলি বিবেচনা করা প্রয়োজন। এই বৈশিষ্ট্যগুলি মুসলিম সমাজের ঐতিহাসিক অনুভূতি এবং সাংস্কৃতিক মূল্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ।
- আল্লাহর সন্তুষ্টিঃ কুরবানির জন্য পশু নির্বাচনের সময়ে আল্লাহর রহমত এবং প্রস্তুতির বিচারে গভীরভাবে ভাবা প্রয়োজন। একটি পশু নির্বাচনের সময়ে যে আল্লাহর নিকটতম পথ এবং আল্লাহর সৃষ্টির নিকটতম পথে সাহায্য করে, সেই পশুটি অন্যান্য পশুগুলির তুলনাতে উত্তম হবে।
কুরবানি পশুর বয়স কেমন হওয়া উচিত?
- উটঃ 5 বছর
- গরু/মহিষঃ 2 বছর
- ছাগল/ভেড়া/দুম্বাঃ 1 বছর
সুতরাং, সঠিক পশু নির্বাচন সংক্রান্তে এই বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে বিবেচনা করা প্রয়োজন যেন প্রত্যাশিত সমাধান প্রাপ্ত হয়।
কুরবানি দেওয়ার সঠিক নিয়ম কি?
কুরবানির পূর্ববর্তী সময় করণীয়।
- নিয়তঃ কুরবানি করার আগে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নিয়ত করতে হবে।
- গোসলঃ কুরবানি করার আগে গোসল করা সুন্নত।
- পরিচ্ছন্নতাঃ কুরবানির পশু, জবাই করার স্থান এবং সরঞ্জাম পরিষ্কার রাখতে হবে।
- শান্ত থাকাঃ কুরবানির পশু জবাই করার সময় শান্ত থাকা এবং রাগান্বিত না হওয়া উচিত।
কুরবানি পশু জবাই করার সঠিক নিয়ম।
- ছুরি দিয়ে জবাই করার আগে "বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম" বলতে হবে।
- কুরবানির পশুকে কিবলামুখী করে শুইয়ে জবাই করতে হবে।
- তীক্ষ্ণ ছুরি দিয়ে দ্রুত জবাই করতে হবে যাতে পশু কমবেশি যন্ত্রণা পায়।
- ছুরি দিয়ে খাদ্যনালী ও শ্বাসনালী একসাথে কেটে ফেলতে হবে।
- জবাই করার পর পশুর রক্ত ঝরিয়ে ফেলতে হবে।
কুরবানির
গোশত বন্টন করার সঠিক নিয়ম।
- তিন ভাগঃ কুরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করে নিতে হবে।
- এক ভাগ নিজের জন্যঃ এক ভাগ নিজেদের জন্য রাখা যাবে।
- এক ভাগ আত্মীয়স্বজনঃআরেক ভাগ আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও বন্ধুদের জন্য বিতরণ করা যাবে।
- দরিদ্রদেরঃ তৃতীয় ভাগ দরিদ্র, অভাবী ও মিসকিনদের জন্য বিতরণ করা উচিত।
- কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করে অর্থ দান করা যাবে।
- হাড় ভেঙে দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা যাবে।
- কুরবানির গোশত দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য নোনতা পানিতে ভিজিয়ে রাখা যাবে।
- কুরবানির গোশত নষ্ট করা যাবে না।
কুরবানি দেওয়ার সঠিক নিয়মগুলি ইসলামিক শরীয়াতে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে। কুরবানির নির্বাচিত পশুটি দেওয়ার আগে আল্লাহর নিকটে নীরবভাবে দোয়া করা যাকে নিয়ত বলা হয়। তারপরে নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে কুরবানি সম্পন্ন করা হয়।
কুরবানির সময় ও স্থানঃ কুরবানি সম্পন্ন করা হবে ঈদ-উল-আযহা পর্বের তিন দিনের মধ্যে, যার
মধ্যে প্রধানতঃ ঈদের দিনে সম্পন্ন করা উচিত। এর সময়ে কুরবানি সম্পন্ন করা উচিত।
নিয়ত করাঃ কুরবানি সম্পন্ন করার জন্য একটি নিয়ত করতে হবে যাতে সারা কাজের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রতি সমর্থ হতে পারে।
পশু নির্বাচনঃ সুস্থ এবং যথেষ্ট বয়স এবং ওজনের একটি পশু নির্বাচন করা উচিত। পশুটির স্বাভাবিক চরণ, স্বাস্থ্য, ওজন ইত্যাদি বিবেচনা করা উচিত।
কুরবানির পশুঃপশুর সম্পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন করা উচিত। এটি কুরবানির পশুর কোমল অংশ বিবেচনা করে করা যাক।
অত্যাবশ্যক প্রস্তুতিঃ কুরবানির পশুর প্রতিটি অংশ নিয়ে যত্ন নেওয়া উচিত, যেন সমস্ত পশুর কোমল অংশ সঠিকভাবে প্রস্তুত হয়।
আল্লাহর কাছে দুআ করাঃ কুরবানির সময় পশুর কাছে খুবই বিশেষ দুআ করা উচিত, যেন আল্লাহ তাদের কবুল করেন এবং সমস্ত বিভাগে বারক্ত দেয়।
সাধারণভাবে, এই সমস্ত পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করা যাক যেন কুরবানি সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।কুরবানি হলো ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেখানে নির্দিষ্ট শর্তাবলী পূরণ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত পশু জবাই করা হয়।
ডিজিটাল সাকসেস আইটির নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url