পিরিয়ডের সময় কেন ব্যথা হয়?

 পিরিয়ড কি?


পিরিয়ড যা মাসিক নামে আমাদের সমাজে পরিচিত।পিরিয়ড হলো মেয়েদের প্রজনন চক্রের একটি স্বাভাবিক অংশ। প্রতি মাসে, জরায়ুর আস্তরণ (এন্ডোমেট্রিয়াম) গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত হয়। যদি গর্ভধারণ না হয় তাহলে এন্ডোমেট্রিয়াম ভেঙে যায় এবং রক্তপাতের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। এই প্রক্রিয়াটি সাধারণত ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে।

পিরিয়ড সময় কেন ব্যথা হয়?

পিরিয়ডের সময় ব্যথা হওয়ার অনেকগুলি কারণ রয়েছে তার মধ্যে কয়েকটি প্রধান কারণ হল।
প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনঃপ্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন হলো শরীরের এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ যা জরায়ুকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে। এই সংকোচনের ফলে জমা রক্ত ​​ও টিস্যু জরায়ু থেকে বেরিয়ে আসে। প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের উচ্চ মাত্রা তীব্র ব্যথার কারণ হতে পারে।

এন্ডোমেট্রিওসিসঃ এন্ডোমেট্রিওসিস হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে জরায়ুর ভেতরের আস্তরণ জরায়ুর বাইরে বৃদ্ধি পায়। এটি তীব্র ব্যথা, ভারী রক্তপাত এবং বন্ধ্যত্বের কারণ হতে পারে।

ফাইব্রয়েডঃফাইব্রয়েড হলো জরায়ুর পেশীতে বেদনাদায়ক গিঁট। এগুলি তীব্র ব্যথা, ভারী রক্তপাত এবং প্রস্রাবের সমস্যার কারণ হতে পারে।

অ্যাডেনোমাইওসিসঃ অ্যাডেনোমাইওসিস হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে জরায়ুর আস্তরণ জরায়ুর পেশীর স্তরে ঢুকে যায়। এটি তীব্র ব্যথা, ভারী রক্তপাত এবং দীর্ঘস্থায়ী মাসিকের কারণ হতে পারে।

হরমোনাল পরিবর্তনঃমহিলাদের মাসিক চক্রে হরমোনাল পরিবর্তন হয় যা বিভিন্ন ফিজিক্যাল এবং মানসিক পরিবর্তনের কারণ হতে পারে। প্রধানত প্রস্তুতি হিসেবে প্রোগেস্টেরোন এবং এস্ট্রোজেনের স্তরে পরিবর্তন হওয়া পরিবর্তন হতে পারে। এই হরমোনাল পরিবর্তনের ফলে ব্রেস্ট টেনডারনেস, মুখের ব্রেকআউট, ক্র্যাম্প, মাথা ব্যথা ইত্যাদি অনেক সাধারণ সমস্যা হতে পারে।

শারীরিক স্থিতিঃ পিয়ডের সময় মহিলাদের শারীরিক স্থিতি পরিবর্তন হতে পারে, যেমন ব্রেস্টে ব্রেস্ট টেনডারনেস, পেটে ক্র্যাম্পিং ইত্যাদি। এই ধরনের শারীরিক সমস্যাগুলি ব্যথা ও অস্বস্তিকর অনুভুতি সৃষ্টি করতে পারে।

মনের অবস্থাঃপিয়ডের সময় মহিলাদের মানসিক অবস্থা পরিবর্তন হতে পারে। মনের অবস্থার পরিবর্তন ফলে চিন্তা, বিরক্তি, অস্থিরতা, অনুপ্রাণিত অনুভুতি ইত্যাদি হতে পারে।

পুষ্টিগত পরিবর্তনঃমহিলাদের মাসিক চক্রের সময়ে খাবারের পরিবর্তন এবং পুষ্টিগত সমস্যার কারণেও ব্যথা হতে পারে। যেমন, শক্তি সম্পন্ন খাদ্য সেবনের অভাব, পর্যাপ্ত পানি পান না করার ফলে ক্র্যাম্পিং এবং ব্রেস্ট টেনডারনেস হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ বাচ্চারা কৃমি আক্রান্ত কি ভাবে বুঝব? 

অন্যান্য কারণ কিছু ক্ষেত্রে, চাপ, উদ্বেগ, অপুষ্টি এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা পিরিয়ডের ব্যথার তীব্রতা বাড়িয়ে দিতে পারে।পেলভিক ইনফ্লেমেটরি ডিজিজ (PID): PID হলো জরায়ু, ডিম্বাশয় বা ফ্যালোপিয়ান টিউবের সংক্রমণ। এটি তীব্র ব্যথা, জ্বর, যোনি স্রাব এবং সঙ্গমের সময় ব্যথার কারণ হতে পারে।

পিরিয়ডের সময় ব্যথার ধরন কয়টি।

প্রাইমারি ডিসমেনোরিয়াঃ এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরণের পিরিয়ডের ব্যথা। এটি সাধারণত কিশোরী তরুণীদের মধ্যে দেখা যায় এবং মাসিক শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে শুরু হয়। ব্যথা সাধারণত তলপেটে অনুভূত হয় এবং কোমর, উরু এবং পায়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়াঃ এটি প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং এন্ডোমেট্রিওসিস, ফাইব্রয়েড, অ্যাডেনোমাইওসিস, PID এবং অন্যান্য অবস্থার কারণে হতে পারে। ব্যথা সাধারণত মাসিক শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগে শুরু হয় এবং মাসিকের সময় তীব্রতর হয়।

মেয়েদের এ সমস্যা চিকিৎসা কি?

মেয়েদের পিরিয়ডের ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে ব্যথার ধরন, তীব্রতা এবং অন্যান্য কারণের উপর নির্ভর করে।

প্রাইমারি ডিসমেনোরিয়ার চিকিৎসা।

  • গরম সেঁকঃতলপেটে গরম সেঁক ব্যথা কমাতে সাহায্য  করতে পারে।
  • ব্যথানাশক ওষুধঃ প্যারাসিটামল, আইবুপ্রোফেন এবং ন্যাপ্রোক্সেনের মতো ব্যথানাশক ওষুধ ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
  • জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িঃ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা ব্যথা কমাতে পারে।
  • হরমোন থেরাপিঃ কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তার হরমোন থেরাপি, যেমন প্রোজেস্টিন বা গনোরিয়া

সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়ার চিকিৎসা।

  • অন্তর্নিহিত কারণের চিকিৎসাঃ সেকেন্ডারি ডিসমেনোরিয়ার চিকিৎসার জন্য প্রথমে অন্তর্নিহিত কারণের চিকিৎসা করা গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, এন্ডোমেট্রিওসিসের চিকিৎসার জন্য ঔষধ, অস্ত্রোপচার বা উভয়ই ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ব্যথানাশক ওষুধঃ ব্যথানাশক ওষুধ ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?

  1. যদি ব্যথা তীব্র হয় এবং দৈনন্দিন কার্যক্রমে বাধা দেয়।
  2. যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
  3. যদি ব্যথা ভারী রক্তপাত, জ্বর, যোনি স্রাব, বা সঙ্গমের সময় ব্যথার সাথে থাকে।

পিরিয়ডের ব্যথার নিয়ে মনে রাখবেন।

  1. পিরিয়ডের ব্যথা একটি স্বাভাবিক ঘটনা।
  2. তবে, তীব্র ব্যথা স্বাভাবিক নয়।
  3. ব্যথার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন উপায় আছে।
ডাক্তারের সাথে কথা বলে আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিকল্প সম্পর্কে জেনে নিন।মেয়েদের পিরিয়ডের সমস্যার চিকিৎসা এবং উপশম করার জন্য পার্থক্য ও বিশিষ্ট পদ্ধতি আছে, যা তাদের সমস্যাগুলি মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ডিজিটাল সাকসেস আইটির নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ১

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৪