যাকাত দেওয়ার নিয়ম কি?/ কাদের যাকাতের টাকা দিব?
যাকাত কাকে বলে?
ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে একটি হলো যাকাত।প্রতি বছর শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের অধিকারী স্বাধীন পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে তাদের আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করার নিয়মকে যাকাত বলা হয়ে থাকে।
যাকাত প্রদান কারির কিছু শর্তাবলী রয়েছে?
- মুসলিম হওয়াঃ মুসলিম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম পালন কারির উপর যাকাত ফরয নয়।
- স্বাধীন হওয়াঃকোন দাস-দাসীর উপর যাকাত ফরয নয়।
- পূর্ণবয়স্ক হওয়াঃ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে যাকাত ফরয হয়।
- নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদঃ শরীয়তের বিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক না হলে যাকাত ফরয নয়।
- এক বছরের সম্পদঃ যে সম্পদের উপর যাকাত দিতে হবে, সেই সম্পদ এক বছর ধরে মালিকানাধীনে থাকতে হবে
কোন সম্পদের উপর কতটুকু যাকাত দিতে হবে?
- সোনাঃ ৮৫ গ্রাম সোনার উপর ২.৫%।
- রুপাঃ ৫৯৫ গ্রাম রুপার উপর ২.৫%।
- নগদ অর্থঃ নির্ধারিত পরিমাণ নগদ অর্থের উপর ২.৫% ।
- ব্যবসায়িক সম্পদঃ ব্যবসায়িক সম্পদের বাজার মূল্যের উপর ২.৫% ।
- জমিঃ জমির ফসলের উপর ১০% বা ৫% ।
কোন কোন খাতে যাকাতের অর্থ দেওয়া যাবে?
- ফকিরঃ যাদের জীবন ধারণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ নেই।
- মিসকিনঃ যাদের জীবিকার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ অপর্যাপ্ত।
- আমিলঃ সমাজের যারা যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ করে।
- রিকাবঃ যারা মুক্তির জন্য অর্থ প্রদান করতে চায়।
- গারিমঃ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যার ঋণ পরিশোধের মত সামর্থ্য নেই।
- ফি সাবিল্লির্হঃ আল্লাহর পথের জন্য যোদ্ধ করতে সর্বদা প্রস্তুত।
- ইবনুস সাবিলঃ যাত্রা পথে অর্থহীন হয়ে পড়ে ।
যাকাত প্রদানের করার কিছু নিয়ম।
- যাকাত নিজের হাতে অথবা বিশ্বস্ত ব্যক্তির মাধ্যমে সব সময় প্রদান করা উচিত।
- যাকাত গোপনে প্রদান করা উওম।
- যাকাত প্রদানের সময় মনে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কথা মনে রাখতে হবে।
যাকাত কত প্রকার ও কি কি?
যাকাত
মানে হচ্ছে ধন-সম্পদের নির্ধারিত
অংশ শরীয়াতের বিধি বিধান মোতাবেক
আল্লাহর পথে ব্যয় করা,
সমর্থ্যবান মানুষের উপর ফরজ করা
হয়েছে।প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিম নর-নারীর উপর
যাকাত হচ্ছে একান্ত কর্তব্য ও ফরজ।
সমাজের
ধনী ও সচ্ছল লোকদের
বাড়তি সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ
প্রতি বছর শরয়তের নিয়ম মেনে আদায়
করে দরিদ্র ও বঞ্চিত লোকদের
মধ্যে যথাযথ বন্টন করাই যাকাত প্রদানের মূল উদ্দেশ্য।এ
যাকাতের কথা পবিত্র কুআনে
কোন কোন মতে ৩২
বার এবং অধিকাংশের মতে
৮২ বার উল্লেখ রয়েছে।পবিত্র
কুরআন বলে-তোমাদের বন্ধুতো
একমাত্র আল্লাহ তাঁর রাসুল এবং
মুমিন বান্দা যারা নামায কায়েম
করে, যাকাত দেয় এবং বিনম্র
(সুরা মায়েদার আয়াত ৫৫)। যাকাতের
উদ্দেশ্য তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহন
কর যাতে তুমি সেগুলোকে
পবিত্র করতে এবং সেগূলোকে
বারাকাতময় করতে পার এর
মাধ্যমে (সুরা তাওবাহ আয়াত
১০৩)। যাকাত বাবদ
যে আংশটা দেয়া হয় সেটা আল্লাহর
নিকট পৌঁছে না। লোক দেখানোর
উদ্দেশ্যে বা লোকে মস্তবড়
দাতা বলে প্রশংসা করবে সে উদ্দেশ্য নয় বরং আল্লহ তালার আদেশ তা মেনে
পালন করা।
ইসলামে পাঁচ প্রকার সম্পদের উপর জাকাত ফরজ করা হয়েছে।
১. স্বর্ণ ও রৌপ্যঃ
- স্বর্ণঃ সাড়ে ৭ তোলা (৮৭.৪৫ গ্রাম) বা তার বেশি স্বর্ণের উপর ২.৫% জাকাত ফরজ।
- রৌপ্যঃ সাড়ে ৫২ তোলা (৬১২.৩৫ গ্রাম) বা তার বেশি রৌপ্যের উপর ২.৫% জাকাত ফরজ।
২. নগদ টাকাঃ
- নগদ টাকা, ব্যাংকে জমানো টাকা, প্রাইজবন্ড, বীমা-ইন্সুরেন্সে জমানো টাকা, কর্জ টাকা, মুদারাবা সঞ্চয়ী ফান্ড - এসবের উপর ২.৫% জাকাত ফরজ।
৩. ব্যবসায়িক সম্পদ পরিমানঃ
- ব্যবসায়িক পুঁজি, জিনিসপত্র, দোকান, যানবাহন, মালিকানাধীন ভবন থেকে প্রাপ্ত ভাড়া - এসবের উপর ২.৫% জাকাত ফরজ।
৪. গবাদিপশুঃ
- ছাগলঃ ৪০টি ছাগলের উপর ১টি ছাগল জাকাত দিতে হবে।
- গরুঃ ৩০টি গরুর উপর ১টি গরু জাকাত দিতে হবে।
- উটঃ ৫টি উটের উপর ১টি ভেড়া জাকাত দিতে হবে।
৫. আবাদি ফসলঃ
- সেচের মাধ্যমে উৎপাদিত ফসলের উপর ৫% এবং বৃষ্টির জলে উৎপাদিত ফসলের উপর ১০% অশুর ফরজ করা হয়েছে।
যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে।
- জাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করা আবশ্যক।
- জাকাতের হিসাব নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন মতামত প্রচলিত আছে।
- জাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে সঠিক জ্ঞান অর্জনের জন্য আলেম-উলামাদের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি?
যাকাত ইসলামের
পঞ্চস্তম্ভের মধ্যে
একটি যা সকলের জানা।কিন্তু যাকাত সবার উপর ফরজ নয়।যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত
রয়েছে।
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত
তিনটিঃ
- ধনী হতে হবে যাকাত দেওয়ার জন্য আপনার অধিকাংশ মালামাল থাকতে হবে।
- যাকাত দেওয়ার সময় আপনার মালামাল নিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে হবে। যাকাত দেওয়ার সময় আপনার মালামাল নিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে হবে, যাতে তার পবিত্র হতে এবং তার মালামাল বারাকাতময় হতে পারে।
- যাকাত দেওয়ার উদ্দেশ্য তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহন করা যাকাত দেওয়ার উদ্দেশ্য তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহন করা যাতে তারা পবিত্র হতে এবং তাদের মালামাল বারাকাতময় হতে পারে।
কত টাকায় কত টাকা যাকাত দিতে
হবে ২০২৪?
২০২৪ সালে যাকাত দেওয়ার নিয়ম অনুসরণ করে আপনি আপনার মালামাল সঠিকভাবে বিতরণ করতে পারেন। যাকাতের নিসাব এবং স্বর্ণের যাকাতের নিসাব নিম্নলিখিত।২০২৪ সালে কত টাকায় কত টাকা যাকাত দিতে হবে তা নির্ভর করে আপনার মোট সম্পদের পরিমাণের উপর। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ অর্জনের পর যাকাত আদায় করা ফরজ।
যাকাত দিলে ফায়দা রয়েছে।
যাকাত
দিলে একদিকে যেমন নিজের সম্পদ
পরিশুদ্ধ হয়।অন্য দিকে সমাজের অসহায়
গরিব দুঃখি মানুষের মাঝে যাকাত প্রদানের
মাধ্যমে সমতা আসে।
ধর্মীয় দিক থেকে দিলে।
- আল্লাহর রহমতঃ যাকাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব হয়।
- পাপের ক্ষমাঃ যাকাত দানের মাধ্যমে পাপের ক্ষমা লাভ করা যায়।
- জান্নাতের পথঃ যাকাত দানকারীদের জন্য জান্নাতের পথ উন্মুক্ত করা হয়।
- দারিদ্র্য দূরীকরণঃ যাকাত সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সাহায্য করে।
- সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধিঃ যাকাত দানের মাধ্যমে সমাজে সম্প্রীতি ও সহযোগিতা বৃদ্ধি পায়।
- অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাঃ যাকাত সমাজে অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ব্যক্তিগত দিক থেকে যাকাত প্রদান করা।
- মানসিক প্রশান্তিঃ যাকাত দানের মাধ্যমে মানসিক প্রশান্তি ও তৃপ্তি লাভ করা যায়।
- আত্মিক পরিশুদ্ধিঃ যাকাত দান আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে ও কৃপণতা দূর করে।
- সম্পদের বৃদ্ধিঃ যাকাত দানের মাধ্যমে আল্লাহর রহমতে সম্পদের বৃদ্ধি ঘটে।
যাকাত দানের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গু অবশ্যয় খেয়াল রাখা জরুরি।
- যাকাতের নিয়ত সঠিক হতে হবে।
- যাকাত যোগ্য ব্যক্তিকে দিতে হবে।
- যাকাত গোপনে দান করা উ ।
- যাকাত দানের সময় অহংকার ও কৃপণতা করা যাবে না।
যাকাত দানের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর রহমত লাভ করতে পারি, সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি এবং আত্মিক পরিশুদ্ধি লাভ করতে পারি।
ডিজিটাল সাকসেস আইটির নিতীমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url